আজ ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কারাবন্দি বিএনপিকর্মীদের স্বজনদের স্মারকলিপি দেওয়ার যাত্রা আটকে দিল পুলিশ

সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে বিএনপি। মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে যাত্রা শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্বজনেরা। যদিও এসময় পুলিশ তাদের আটকে দেয়।

আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা।

এর আগে বেলা ১১টায় মানববন্ধনে অংশ নিতে বিএনপি নেতাদের স্বজনেরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন।

এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

এতে সংহতি প্রকাশ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

কর্মসূচিতে কারাগারে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবুল বাসারের স্ত্রী বলেন, আমার সন্তানকে এতিম করেছে, পুলিশ আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, যার ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।

ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের এক স্বজন বলেন, আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ এক মাস গুম করে পরে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এক বছর আগে আমার ভগ্নিপতিকে লক্ষ্মীপুরে র‍্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে, তিনি বিএনপি করতেন, পরে আমরা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে র‍্যাব আমাদের লাশটা দেয়। তারা প্রথমে লাশ পর্যন্ত দিতে চায়নি।

যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, আমার কোথায় যাব? আমার স্বামীর মামলার বাদী পুলিশ, মামলা করলোও পুলিশ,সাক্ষী দিলও পুলিশ- এটা কেমন বিচার!

ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, আমার তিন ছেলে ও এক ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয় স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ।

২০১৩ সালে ‘গুম হওয়া’ বিএনপি নেতা কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনা আক্তার বলেন, আমার সন্তানের বয়স ১৩ বছর, সে এখনো বুঝ হওয়ার পর বাবাকে দেখেনি। যখন সে বলে মা আমার বাবার মুখ কি আর দেখতে পারবো না? তখন আমার বুকটা ফেটে যায়। ’

রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের ছেলে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছে- আমার বাবার মুক্তি চাই।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেক নির্যাতিত উল্লেখ করে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, আমার বাড়িতে কিছুদিন আগে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। সে যে কী ভয়াবহ দৃশ্য। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন আমার নাতি-নাতনিরা বাসায় ছিল না, তারা সবাই স্কুলে ছিল। সেদিন পুলিশ যত রকমের অ্যাভিডেন্স ছিল সব কিছু নিয়ে গেছে। এমনকি সিসিটিভির ফুটেজ পর্যন্ত নিয়ে চলে গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এখানে আপনারা দেখেছেন অনেক মা, অনেক বাবা আজকে কাঁদছেন। তাদের স্বজনরা আজ কেউ কারাগারে, কেউ গুম হয়ে গেছে, কেউ খুন হয়ে গেছে। কিন্তু এই সরকারের হৃদয়ে তাদের কান্না শব্দ নাড়া দেয় না। ওরা অবৈধ ক্ষমতাকে শুধু টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সমানে কারাগারে ঢুকাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমরা অবসান চাই। এই অবস্থার অবসানে আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা রাজপথে নামি, প্রতিবাদ জানাই।’আপনারাও নেমে আসুন। দেখা যাক কতজনের রক্তের ওপর দিয়ে বর্তমান সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবারও ক্ষমতায় যান।

কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী শাহানারা মায়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে তাসমিনা তাব্বাসুম রাফি, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, মির্জা আব্বাসের ছোট বোন সাহিদা মির্জা, এস এম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়া জাহাঙ্গীর, ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমানের মেয়ে মর্জিয়া আখন্দ, নেসার উদ্দিন রাব্বীর স্ত্রী মীরু, কাউসার হোসেনের স্ত্রী মোসা. মিনু আখতার, পিরোজপুরের কাজী ওয়াদিদুজ্জামান বাবলুর স্ত্রী তামান্না জাহান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর...